Original price was: 1.50$.1.00$Current price is: 1.00$.
“নীলাকাশ” এক তরুণের প্রেম, স্বপ্নভঙ্গ ও আত্মধ্বংসের করুণ মনস্তাত্ত্বিক কাহিনি। সমাজ-পরিবারের অবহেলা ও সহানুভূতির অভাবে এক সম্ভাবনাময় জীবন নিঃশব্দে বিলীন হয়ে যায়। আকাশ হারায়, কিন্তু তার গল্প রয়ে যায়—একটি নীলাকাশে, যেটা আজও তাকিয়ে আছে নিঃশব্দে।”
Description
“নীলাকাশ” শুধুই একটি প্রেমের গল্প নয়—এটি এক করুণ বিদায়ের উপাখ্যান, এক মনস্তাত্ত্বিক যাত্রাপথ, যেখানে প্রেম, স্বপ্ন, পরিবার ও সমাজ মিলে তৈরি করে এক অনিবার্য ট্র্যাজেডি। আবদুল আজিজ রাজু তাঁর ভাষার মাধুর্য আর বাস্তবধর্মী চিত্রায়ণের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন এক তরুণের হৃদয়বিদারক পতনের কাহিনি, যা পাঠকের হৃদয়ে দীর্ঘস্থায়ী দাগ কাটে।
গল্প শুরু হয় গ্রামীণ পটভূমিতে—সাদুল্লাপুরের ইব্রাহীম মাস্টারের বাড়িতে আজ শোকের ছায়া। তার বড় ছেলে আকাশের অকালমৃত্যুতে স্তব্ধ গ্রাম, স্তম্ভিত পরিবার। ভাই সবুজ জানে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ, তবে মুখে কিছু না বললেও তার চোখে রয়েছে অজস্র না বলা কথা। আকাশের মৃত্যু কেবল একটি পারিবারিক শোক নয়—এটি এক নিঃশব্দ সম্ভাবনার পতন, এক প্রতীক যা সমাজের ব্যর্থতা, পারিবারিক দুর্বলতা এবং সম্পর্কের শীতলতাকে নগ্ন করে তুলে ধরে।
আকাশ: এক নিরীহ, স্বপ্নদ্রষ্টা, সংবেদনশীল তরুণ। বাবার একগুঁয়েমি, শাসন, মায়ের নিরুপায় মমতা আর জীবনের বাস্তবতা মিলে তার ভেতরে জন্ম দেয় এক গভীর শূন্যতা। কিন্তু সে হঠাৎ করেই জীবনের এক নতুন মোড় পায়—এক শীত সকালের বাসযাত্রায়। সেই যাত্রায় দেখা হয় নীলা নামের এক মেয়ে সঙ্গে, যার সরল হাসি, নম্র স্বভাব ও একরাশ কৌতূহল আকাশের হৃদয়কে আন্দোলিত করে।
সেই বাসযাত্রা গড়ে তোলে এক অদ্ভুত সংযোগ। আরেকটি সকালে আবার দেখা—এবার সখ্য, আলাপ আর হৃদয়ের উষ্ণতা। ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে এক স্বপ্নভরা প্রেম, যা আকাশকে দেয় নতুন জীবনের অর্থ, নতুন আত্মবিশ্বাস। নীলা হয়ে ওঠে তার প্রেরণা, সহচরী, জীবনের লক্ষ্য।
কিন্তু জীবনের গল্প সবসময় সুখের হয় না। প্রেম ও পড়াশোনার দ্বন্দ্ব, পরিবার থেকে তীব্র মানসিক চাপ, অর্থকষ্ট, বাবার অবহেলা ও হুমকি—সব কিছু আকাশকে ঠেলে দেয় এক ক্লান্তিকর দোলাচলে। যদিও নীলা তাকে অনুপ্রেরণা দেয়, তার স্বপ্নকে লালন করে, তবুও বাস্তবতা সহজ নয়। চিঠি, দেখা, দূরত্ব—সবকিছু মিলে জন্ম নেয় ভালোবাসার জেদ, কিন্তু একরাশ অস্থিরতারও।
নতুন করে স্বপ্ন দেখা শুরু করে আকাশ—মেডিক্যালে পড়বে, প্রতিষ্ঠিত হবে, নীলাকে নিয়ে সংসার গড়বে। কিন্তু হঠাৎ একদিন খবরের কাগজে ছোট্ট এক কলামে সে পড়ে—নীলা আর নেই। সড়ক দুর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছে তার সব কিছু। মুহূর্তেই পৃথিবী থেমে যায় আকাশের জন্য। সেই শোক, সেই হারানোর বেদনা, তার সমস্ত ইচ্ছা ও চেষ্টাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেয়।
নতুন করে শুরু করেও পারেনি সে। পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগ, মেডিক্যালে ভর্তি না হওয়া, চাঁদপুর কলেজে যাওয়া, রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া, সমাজের ফাঁক-ফোকরে হারিয়ে যাওয়া—সব মিলিয়ে আকাশ এক বিভ্রান্ত পথিক হয়ে ওঠে। বাবার সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে, মা নাদিরা বেগম ভালোবাসলেও কিছু করতে পারেন না। জীবনকে অর্থহীন মনে হয় তার।
তার পরিণত জীবন আরও করুণ—বন্ধু নেই, লক্ষ্য নেই, কেবল রয়েছে একটিমাত্র ছবি—নীলার। আর আছে মংলু নামের এক চরিত্রহীন কিন্তু সহানুভূতিশীল ব্যক্তি, যে তাকে চেনায় ‘ইস্টিক’ নামের এক মাদক। শুরু হয় এক নিঃশব্দ আত্মহননের পালা। জীবন হয়ে ওঠে নেশায় মোড়া এক বিক্ষিপ্ত যাত্রা।
তবুও জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছে সে অনুভব করে—সবকিছু শেষ হয়ে যায় না। একদিন মালা নামের এক নার্স তাকে সেবা করে, তার ভেতরের শেষ আলোটুকু জ্বালিয়ে দেয়। তখনই স্বপ্নে সে দেখে—নীলা তাকে ডাকছে। দাদু বলছে, “ঘরে ফিরে যা”। অবচেতনে জন্ম নেয় এক নতুন ইচ্ছা—ফিরে যাওয়ার, ক্ষমা চাওয়ার, নিজেকে আবার খোঁজার।
নীলাকাশ একটি আত্মিক যাত্রা, যেখানে প্রেম হারায়, স্বপ্ন ভেঙে পড়ে, সম্পর্ক ছিন্ন হয়—তবুও ভালোবাসা থেকে যায়। লেখক আবদুল আজিজ রাজু এখানে কেবল একজন তরুণের করুণ পরিণতির কথা বলেননি—তিনি এক সামাজিক দলিল রচনা করেছেন, যেখানে ব্যর্থতা কেবল ব্যক্তির নয়, গোটা সমাজের। বাবা-মায়ের মধ্যকার সম্পর্ক, সন্তানের মানসিক বিকাশে তাদের ভূমিকা, অর্থনৈতিক চাহিদার দ্বন্দ্ব—সবই গল্পের পরতে পরতে উঠে এসেছে।
আকাশের মৃত্যু নিছক একটি দেহের পতন নয়—এটি এক স্বপ্নের মৃত্যু, একটি সম্ভাবনার নিভে যাওয়া প্রদীপ। কিন্তু তার গল্প আমাদের মনে করিয়ে দেয়—ভালোবাসা কখনো মরে না, কেবল তার রূপ বদলায়।
শেষ দৃশ্যটি এই উপলব্ধির প্রতীক—আকাশের কল্পনায় নীলা তাকে বলে, “নীলাকাশের দিকে তাকাও, এখনো তোমার জন্য রঙ লুকানো আছে।” যেন বোঝায়, যতই ভেঙে পড়ো, কোথাও না কোথাও আশার আলোর রেখা থেকে যায়।
উপসংহার:
নীলাকাশ আমাদের আত্মা ছুঁয়ে যায়, আমাদের ভুলিয়ে দেয় না—একটা ‘আকাশ’ ছিল, যে ভালোবাসতে জানত, যে স্বপ্ন দেখতে জানত, কিন্তু যে হারিয়ে গিয়েছিল সমাজের নিষ্ঠুর বাস্তবতায়। সে আমাদের শিখিয়ে যায়—ভালোবাসা শেষ হয় না, কেবল নীরব হয়ে যায়। আর মানুষ—যে নীরব যুদ্ধে নিজেকে হারায়—তার গল্পটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
এই উপন্যাস তাই শুধু পড়ার জন্য নয়—অনুভবের জন্য, উপলব্ধির জন্য। কারণ, প্রত্যেক পাঠকের ভেতরেই কোথাও এক আকাশ বাস করে—ভাঙা, কিন্তু স্বপ্নে রাঙানো।
Really mind-blowing performance !!