বাংলার গ্রাম, সত্যিই অপরুপ! কতটা সুন্দর, তা হয়তো লেখনীতে বুঝানো সম্ভব নয়। শাহনাজ রহমতুল্লাহর সেই অবিস্মরণীয় গান ‘’একবার যেতে দেনা আমায় ছোট্ট সোনার গাঁয়, যেথায় কোকিল ডাকে কুহু, দোয়েল ডাকে মুহু””। ছোটবেলায় বহুবার শুনেছি আর ভেবেছি কি আছে গ্রামে? এমনটা মনে হওয়ার কারণ ছিল, আমার শৈশব কেটেছে গ্রামে আর স্বপ্ন ছিল শহরে জীবনের চাকচিক্য। কিন্তু দীর্ঘ সময়ে শহরে কাটানোর পর সত্যিই মনে হলো এই গানটি। গ্রামের সৌন্দর্য প্রকৃতির এক নিপুণ সৌন্দর্যের প্রতীক, সবুজ তৃণভূমি এবং মাঠের পর সবুজ মাঠ। বন্য ফুলের মাটির সুগন্ধি এবং সদ্য কাটা খড়ের মিষ্টি সুগন্ধে ভরে উঠে মন। আকাশ উপরে প্রসারিত, সূর্যোদয়ের সময় নীল এবং সোনার রঙে আঁকা একটি ক্যানভাস এবং রাতের তারা ভরা আকাশ ।
গ্রামের জীবন একটি মৃদু গতিতে উদ্ভাসিত হয়, প্রকৃতির ছন্দের সাথে তাল মিলিয়ে। সকাল শুরু হয় গান,পাখির স্নিগ্ধ কলকাকলি এবং ভোরের সোনালি রশ্মি দিয়ে। গ্রাম জুড়ে, নানান রকমের গাছগুলো গর্বিতভাবে দাঁড়িয়ে আছে, তার ফাঁকে বেড়ার মধ্য দিয়ে উঁকি দিচ্ছে ঋতুর অনুগ্রহের সাথে সমৃদ্ধ প্রাণবন্ত পুষ্প। প্রতিটি বাড়ি একটি বাগানের মত, ছোট বড় কাঁচাপাকা ঘরগুলো যেন ছবির মত সুন্দর। গ্রামীণ জীবন সম্প্রদায়ের বন্ধনে সমৃদ্ধ হয়। প্রতিবেশীরা একে অপরকে নামে চেনে, প্রকৃত উষ্ণতা এবং প্রস্তুত হাসি দিয়ে শুভেচ্ছা জানায়। কথোপকথনগুলি সহজে প্রবাহিত হয়, প্রায়শই ভাগ করা খাবার বা গ্রামের চত্বরে স্বতঃস্ফূর্ত জমায়েত হয়। সাম্প্রদায়িক অনুষ্ঠান আয়োজন করা, চাকরিজীবী থেকে কৃষক প্রতিটি সদস্যেরই ভূমিকা রয়েছে।
গ্রামীণ জীবনের সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক দিকগুলির মধ্যে একটি হল জমির সাথে এর সংযোগ। যতদূর চোখ যায় মাঠগুলি প্রসারিত হয়, ঋতুর সাথে পরিবর্তিত হয় – বসন্তে বন্য ফুলে জ্বলে, গ্রীষ্মে গমের সাথে সোনালি, এবং শীতকালে কুয়াশার চাতরের নিচে নিঃশব্দ। কৃষকরা মাটিতে পরিশ্রম করে নতুন সৃষ্টির করে অন্বেষণে। সন্ধ্যার সাথে সাথে দিনটি ম্লান হয়ে যায়, অস্তগামী সূর্য দীর্ঘ ছায়া ফেলে ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ অন্ধকারে ঢেকে যায়। গ্রাম তখন শান্তিপূর্ণ নিস্তব্ধতায় স্থির হয়ে যায় শুধু মাঝে মাঝে কুকুরের ঘেউ ঘেউ শব্দ শুনা যায়।
বাংলার গ্রামগুলো সত্যিই সুন্দুর । সবুজ ধানের চারায় বাতাসের ঢেউ সত্যি হৃদয় কাড়ে সেজন্যই হয়ত কবি জীবনানন্দ দাস বলেছেন বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর।। প্রকৃতির সৌন্দর্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে, চারপাশের নয়নাভিরাম দৃশ্যাবলি হৃদয়-মন কেড়ে নেয়। তার মায়ায় মন ভুলে যায় বেদনার মুহূর্তগুলো। ফিরে পায় হারানো স্মৃতি। আল্লাহতায়ালা মনোমুগ্ধকর রূপে গ্রামকে সাজিয়েছেন। তাই আধুনিক কারুকলা ও আর্ট শিল্পের চাকচিক্যের রূপ সবুজ প্রকৃতির রূপের সামনে ক্ষীণ ও লঘু। নারীর রূপে পুরুষ যদি হয় পাগলপারা, তাহলে প্রকৃতির রূপে হবে বিস্ময়, বিমূঢ় ও আত্মহারা। কারণ, সবুজের মাঝে তৃপ্তি-প্রশান্তি অনুভব না হলে, তাকে বড় নির্জীব ও শূন্য লাগে।
লেখক: আবদুল আজিজ
কন্টেন্ট রাইটার